প্রতিদিন "গুড়" কেন খাবেন ?
"গুড়" হলো আখের অপরিশ্রুত রূপ।একে ইংরেজিতে "Jaggery" বলা হয়। স্বাস্থ্যকর মিষ্টিকার খাবার হিসাবে গুড় খাওয়া উচিত। আখের রস কে গরম করে বিশেষ পদ্ধতিতে গুড় তৈরি করা হয়।তৈরি করার পদ্ধতি অনুযায়ী গুড় তিন ধরনের হয় ঝোলাগুড় , কঠিন গুড় এবং দানাদার গুড়। যেহেতু গুড় শুধু মিষ্টিই নয় এর মধ্যে প্রচুর স্বাস্থ্যকর গুন্ও আছে, তাই যাদের মিষ্টি খাবার সখ, তাদের গুড় কে খাদ্য তালিকায় নেওয়া উচিত। এখন গুড়ের পৌষ্টিক উপাদান গুলিকে আমরা দেখবো এবং গুড় খেলে যে পুষ্টিগত লাভ আমরা পাই তা সম্বন্ধে আলোচনা করবো।
গুড়ের পৌষ্টিক উপাদান গুলি নিচে দেওয়া হলো:-
"গুড়" খাবার উপকারিতা গুলি হলো :-
গুড়ের
মধ্যে বেশি পরিমানে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এবং আয়রন আছে, এবং খুব অল্প পরিমানে কোলেস্টেরল এবং
স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে। মনে রাখবেন চিনির মতোই সমান পরিমানে মিষ্টির পরিমান গুড়ের
মধ্যে থাকে। তবে গুড়ের মধ্যে অন্যান্য উপকারী উপাদান যেমন আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, কপার, ক্লোরাইড, এবং ভিটামিন যেমন ভিটামিন A, B1, B2, B5, B6, C, D2, E, নিকোটিনিক অ্যাসিড ইত্যাদি থাকে, যা চিনিতে থাকে না। তাই গুড় পুষ্টিকর এবং শরীরের ক্ষেত্রে
অনেক উপকারী।
মধুমেহ
রোগীদের চিনি খাবার পরিবর্তে গুড় খাওয়া উচিত।
আয়রন:-গুড়ে
প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকায় গুড় রক্তকে সুদৃঢ় করে। রক্ত গঠনে সাহায্য করে। যাঁরা
রক্তাল্পতা এবং মাথা ব্যাথা রোগে ভোগেন তাঁদের গুড় খাওয়া দরকার।এর মধ্যে থাকা আইরন
রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করে।
জিংক:-গুড়ের
মধ্যে থাকা জিংক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে। ইহা শরীরের প্রতি অংশে মরে যাওয়া
কোষকে পুনর্গঠনে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুর্বল কোষকে সতেজ হাতে সাহায্য করে।শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ম্যাগনেসিয়াম:-গুড়ের
মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম পাকস্থলী তথা পৌষ্টিক তন্ত্র কে সুদৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন 100 গ্রাম গুড় খেলে শরীরের 40 শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম এর প্রয়োজনিত মিটে যায়।
ক্যালসিয়াম:-
গুড়ে প্রচুর পরিমানে থাকা ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় গঠনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম এবং
ম্যাগনেসিয়াম মিলে শরীরের হাড় কে সুদৃঢ় রাখে।
পটাসিয়াম:-গুড়ের
মধ্যে থাকা পটাসিয়াম হার্ট এট্যাক এর সম্ভাবনা কমায়। ইহা রক্ত চাপ(ব্লাড প্রেসার)কে সঠিক মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ হার্ট এর রোগী এবং সুগার এর
রোগীর জন্য গুড় হলো ভালো মিষ্টান্ন ।
সমপরিমাণ
চিনির পরিবর্তে গুড় খেলে রক্তে সুগার এর মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে যার ফলে শরীরের বিশেষ ক্ষতি করে না।
এই জন্য খাদ্যের মধ্যে চিনির পরিবর্তে গুড় খাওয়া অনেকটা নিরাপদ।
গুড়
খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে।রক্ত থেকে দূষিত বস্তু দূর করতে সাহায্য করে, রক্তকে কে শুদ্ধ করে।শরীরে জালের পরিমান সঠিক মাত্রায়
বজায় রাখতে সাহায্য করে।গুড়ের মধ্যে থাকা এনজাইম খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে, এবং কোস্টকাঠিন্য দূর করে।
গুড়ের মধ্যে থাকা জিংক এবং সেলেনিয়াম শরীর কে "ফ্রি রেডিক্যাল" এর ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। শরীরে জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
যাঁরা
স্বাসকষ্টে ভোগেন তাদের জন্য গুড় উপকারী।এজমা এবং সর্দি ইত্যাদি ক্ষেত্রে রোগ
সারতে সহায়ক।
গুড়ের
সঙ্গে তিল মিশিয়ে খেলে স্বাসকষ্টজনিত রোগ সারতে সাহায্য করে। তিল এবং গুড় এর নাড়ু বানিয়ে রাখা যেতে
পারে এবং নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
চায়ের
মধ্যেও চিনির পরিবর্তে গুড় মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
লিভার
এর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং জন্ডিসে এর মতো রোগ সারতে গুড় খাওয়া উপকারী।
গুড়ের
মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং সোডিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।যাঁরা রক্তচাপ জনিত
রোগে ভোগেন তাঁদের চিনির পরিবর্তে গুড় খাওয়া উপকারী।
গুড়
শরীরের তাপমাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
যে
সব মহিলার "পিরিয়ড" চলাকালীন ব্যাথা হয় বা "পিরিয়ড" চলাকালীন
হাতপা ব্যাথা করে, তাদের গুড়ের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে
মাংসপেশির টান এবং ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করবে।
গুড়ের
মধ্যে প্রচুর পরিমানে আয়রন এবং ফোলেট থাকায় রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়ক সেই
জন্য ডাক্তার গর্ভবতী মহিলাদের গুড় খাবার পরামর্শ দেন।
গুড় মূত্রনালী এবং কিডনি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা মূত্ররোগ জনিত সমস্যায় ভোগেন
তাদের জন্যেও গুড় বিশেষ উপকারী।
যাঁরা গেঁটেবাত হাঁটুব্যথা ইত্যাদি হাড়ের ব্যাথায় ভোগেন, তাঁদের জন্য গুড় খাওয়া বিশেষ উপকারী। আর্থ্রাইটিস রোগীর জন্য গুড় বিশেষ উপকারী।
গুড়ের
মধ্যে বেশি ক্যালোরি থাকায় বেশি গুড় খেলে শরীরের ওজন বাড়তে পারে।শরীরে শর্করার
পরিমান বাড়তে পারে। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ক্যালোরিফিক ভ্যালু হিসেবে করেই প্রতিদিন
গুড় খাওয়া দরকার।
বর্ষাকালে
ঝোলা গুড়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থাকতে পারে, তাই বর্ষাকালে শুকনো গুড় ব্যবহার করবেন।
উপরের এই তথ্য ভালো লাগলে এবং উপকারী মনে হলে অবশ্যই Like এবং Share করুন।
আরো পড়ুন:- "হলুদ" প্রতিদিন খেলে কি উপকার হবে ? , "কলা" প্রতিদিন কেন খাওয়া দরকার?
গম খেলে কি কি পুষ্টিগত উপকার পাওয়া যায় ? , "চীনাবাদাম কেন খাওয়া দরকার ?
ছোলা(চানা) প্রতিদিন কেন খাওয়া দরকার ? , "গুড়" প্রতিদিন কেন খাওয়া দরকার?
"ভাত "খেলে কি পুষ্টিকর উপকার পাওয়া যায় ? , "আপেল" খেলে কি উপকার হয়?
For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com
For Motivational Articles In Bengali visit..... www.swarojgarvikash.com
0 Comments