প্রতিদিন বাদাম কেন খাবেন ?
"চীনাবাদাম" হিন্দিতে যাকে
"মুংফুলি" বলি এবং ইংরেজিতে যার নাম "গ্রাউন্ড নাট", কোষ জাতীয় শস্যের মধ্যে পড়ে।
এর স্বাদও অনেকটা "বাদাম" বা "আখরোট" এর মতোই। এগুলি চীনাবাদাম গাছের মূলের মধ্যে সারবস্তু সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয়।আজ আমরা চীনাবাদাম এর পুষ্টিকর গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করবো।
চীনাবাদামের পুষ্টিকর উপাদানগুলির তালিকা :-
চীনা বাদাম এর পুষ্টিগত গুণাবলী:-
"চীনাবাদাম" এর পুষ্টিগত গুন্ অনেক। চীনা বাদামের মধ্যে খুব বেশি
পরিমানে ফ্যাট, প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে।এছাড়াও এর
মধ্যে বেশি পরিমানে পটাসিয়াম, ফসফোরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিনগুলি
থাকে।বাদামে বেশি ক্যালোরি থাকায় দেহে শক্তি প্রদান করে।100gm
চীনাবাদাম খেলে 567 কিলো ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্যকর
ফ্যাট, প্রোটিন, এবং ফাইবারে থাকায় কোনো ব্যক্তি প্রতিদিন বাদাম খেলে নিজেকে পরিপূর্ণ
এবং শক্তসমর্থ মনে হয়।
প্রোটিন:-মানব
দেহে একদিনে যে পরিমান প্রোটিন প্রয়োজন তার ৫০% প্রোটন ১০০ গ্রাম বাদামের মধ্যেই
পাওয়া যায়। সাধারণত প্রত্যেকদিন পুরুষের প্রোটিন এর চাহিদা ৫৬ গ্রাম এবং নারীর প্রতিদিন
৪৬ গ্রাম প্রোটিন দরকার।
প্রোটিন
শরীর গঠনে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর
ফ্যাট:- খাদ্যের মধ্যে ফ্যাট হলো দরকারি আহার।বাদামের মধ্যে বেশির ভাগ মনোস্যাটুরেটেড
এবং পলিস্যাটুরেটেড ফ্যাট থাকে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। মনোস্যাটুরেটেড ফ্যাট
শরীরের কোলেস্টেরল লেভেল উন্নত করে।এবং স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।বাদামের
মধ্যে অল্পপরিমানে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে কিছুটা ক্ষতিকর।
প্রয়োজনীয়
ফাইবার:-100 গ্রাম বাদামে 8.5 গ্রাম ফাইবার থাকে, যা একজন পুরুষের
দৈনিক প্রয়োজনের ১/৪ অংশ।ফাইবার হলো হৃদ যন্ত্রের সহায়ক।প্রতিদিন ফাইবার যুক্ত
খাবার খেলে রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ভালো থাকে।হার্ট এটাক থেকে রক্ষা করে। টাইপ
২ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করে।
লাল
খোসা সমেত চীন বাদাম খেতে চেষ্টা করুন।বাদামের লাল খোসায় প্রচুর পরিমানে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের ক্ষত নিরাময়ে, রোগ নিরাময়ে এবং মৃত কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
চীনাবাদাম
হৃদযন্ত্র সতেজ রাখে, স্বাস্থ্য সুগঠিত রাখে, শরীরের রক্তে শর্করার পরিমান সঠিক রাখে।
প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম বাদাম খেলে এমনকি ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।
ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য চীনাবাদাম বিশেষ উপকারী।বাদামের "গ্লাইসেমিক ইনডেক্স" কম হওয়ায় শরীরের ব্লাড সুগার এর মাত্রা সঠিক বজায় সাহায্য
করে।
চীনাবাদাম এর মধ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ আছে:-
কপার
:- চীনাবাদাম এ যথেষ্ট পরিমানে "কপার" থাকে যা খুব প্রয়োজনীয়।ইহা গ্লুকোজ
এবং কোলেস্টেরল মেটাবলিজম এ সহায়ক। শরীরে শক্তি তৈরিতে, রক্তে রক্তকণিকা গঠনে ,কোলাজেন প্রোটিন গঠনে সহায়ক। মস্তিস্ক, মাথার খুলি, হার্ট, লিভার ইত্যাদি গঠনে এটি বিশেষ ভাবে
প্রয়োজন।শরীরে "কপার" এর অভাব হলে "হার্ট এটাক" এর সম্ভাবনা
বেড়ে যায়।
বায়োটিন
:- চীনা বাদামে প্রচুর পরিমানে "বায়োটিন" থাকে।ইহা কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, এবং এমাইনোঅ্যাসিড এর মেটাবোলিজম এর জন্য প্রয়োজন।
ফার্টিলাইজেশন এর চার দিন পর থেকে গর্ভে
ভ্রূণ থেকে শিশু গঠনে বায়োটিন বিশেষ
ভূমিকা রাখে। সেই জন্য গর্ভবতী মহিলার জন্যে চীনাবাদাম খাওয়া খুব প্রয়োজন।
ভিটামিন B3:- চীনা বাদামে প্রচুর পরিমানে
থাকে। নিয়াসিন(Vitamin B3) কার্বোহাইড্রেট থেকে ফ্যাট এবং গ্লুকোজ এ রূপান্তর করতে সাহায্য
করে। স্নায়ুতন্ত্র কে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।ইহা
যৌনক্রিয়া এবং মানসিক চাপ জনিত কর্ম কে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। শরীরে রক্ত
সঞ্চালন এবং রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ম্যাগনেসিয়াম:-চীনা বাদামে ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমানে থাকে। ইহা হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পেশী গঠনে এবং যৌন হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।শরীরে রক্ততঞ্চনে, হাড় গঠনে,ক্যালসিয়াম গ্রহণে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভাবে সহায়ক। মস্তিস্ক এবং স্নায়ুর কার্যকারিতার জন্যে ম্যাগনেসিয়াম খুবই প্রয়োজনীয়।
ফোলেট
বা ভিটামিন b9:-
চীনা বাদামে এই ভিটামিন প্রচুর পরিমানে
থাকে। দেহের কোষ এবং কলা গঠনে সহায়তা করে। নতুন কোষ গঠনে সহায়ক। এটি প্রেগন্যান্সি কালে মহিলাদের
খুব প্রয়োজন।
এছাড়া চীনা বাদামে "ফাইটিক অ্যাসিড" থাকে যা শরীরে আইরন এবং জিঙ্ক সংরক্ষণে সাহায্য করে।
চীনা
বাদামে "ফাইটোস্টেরল"
পাকনালী থেকে কোলেস্টেরল শোষণে সাহায্য
করে।
চীনাবাদাম "রেসভেরাট্রল" নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সার নিরাময়ে সহায়ক।
ঝুঁকি:-চীন বাদামে "আরাচীন" এবং "কোনারাচীন" নামক প্রোটিন থাকে।তাই কারো কারো এর জন্যে এলার্জি হাতে পারে।এরকম হলে বাদাম কম খাবেন।
কাঁচা
বাদামের তুলনায় ভাজা বাদামে পুষ্টি কিছুটা কমে যায়। ভাজা বাদামে লবন মিশ্রিত থাকে, সেই লবন এর মধ্যে যে সোডিয়াম থাকে, তা মাত্রাধিক খাওয়া হলে তা রক্তচাপকে
বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন লবন খাবার সাধারণ মাত্রা হলো 1500 মিলিগ্রাম, এবং সেই প্রতিদিনেই মাত্রা কোনো মতেই 2300 মিলিগ্রাম যেন পার না হয়, এই
পরিমান প্রায় এক টেবিলচামচ লবনের সমান । বিশেষ করে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন
তাঁরা যেন এই ব্যাপারে বেশি সাবধান থাকেন।
উপরের এই তথ্য ভালো লাগলে এবং উপকারী মনে হলে অবশ্যই Like এবং Share করুন।
আরো পড়ুন:- "হলুদ" প্রতিদিন খেলে কি উপকার হবে ? , "কলা" প্রতিদিন কেন খাওয়া দরকার?
গম খেলে কি কি পুষ্টিগত উপকার পাওয়া যায় ? , "চীনাবাদাম কেন খাওয়া দরকার ?
ছোলা(চানা) প্রতিদিন কেন খাওয়া দরকার ? , "গুড়" প্রতিদিন কেন খাওয়া দরকার?
"ভাত "খেলে কি পুষ্টিকর উপকার পাওয়া যায় ? , "আপেল" খেলে কি উপকার হয়?
For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com
For Motivational Articles In Bengali visit..... www.swarojgarvikash.com
0 Comments